হুমায়ূন আহমেদ বিপুল জনপ্রিয়তা পাওয়া বিরল গোত্রের লেখকের একজন। তাঁর প্রায় সকল বই-ই বহুল পঠিত, তবু “গৌরীপুর জংশন” নিয়ে হুমায়ূন-প্রেমীদের মধ্যে চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যায় না। অনেকের কাছে এটি অপঠিতই থেকে গেছে। ব্যাপারটি বিস্ময়কর, কারণ হুমায়ূন আহমেদ রচিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর একটি “গৌরীপুর জংশন”। এ উপন্যাস নিয়ে পাঠকদের আপাত নীরবতা এটাই নির্দেশ করছে যে, এই উপন্যাসটি চিরায়ত হুমায়ূনীয় ফর্মুলায় রচিত হয় নি। এই উপন্যাসে নেই হিমুর মতো রহস্যময় চরিত্র, কিংবা মিসির আলী সিরিজের মতো আকর্ষণীয় রহস্য। এই উপন্যাসে কেবলই একটি নিভৃত স্টেশনের বসবাসরত নিম্নবিত্তের আটপৌরে জীবন উঠে এসেছে, যা অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পাঠকের অচেনা।“গৌরীপুর জংশন”এর প্রধান চরিত্র জয়নাল। সে গৌরীপুর স্টেশনে বসবাসরত মধ্যবয়সী কুলী, যার যৌবন বিগত এবং ‘এখন যার দশা কোমর-ভাঙা কুকুরের মতো’। চালের বস্তা কোমরে পড়ে কোমর চেঙে যাওয়ার পর কুলীর জীবন ত্যাগ করেছে, কিন্তু স্টেশন ত্যাগ করে নি; কারণ কোথায়ই বা যাবে সে। জয়নাল বর্ণিল একটি চরিত্র। স্টেশনের অন্য সব চরিত্রের মতোই স্বার্থপরতা তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যমান, কিন্তু অনাথ শিশু বজলুর জন্য দয়াময় একটি মনের দেখা পাই আমরা। বজলুকে নিজের সাথে রাখে, খাওয়ায়, জীবনে চলার জন্য নানা উপদেশ দেয়। মালবাবু আর সিগনাল-ম্যান রমজানের সাথে তার বেশ খাতির। নানান সময়ে তারা জয়নালকে নানানভাবে সাহায্য করেছে, জয়নাল এ সত্যটা কখনো ভুলতে পারে না, তাদের জন্য কিছু করার চিন্তা সবসময় তাকে ঘিরে থাকে। জয়নালের চরিত্রে অসদগূণগুলো তার নানা কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পায়। স্টেশনের পুরনো সর্দার মোবারককে নিগৃহীত হতে দেখে আনন্দ পায়, পুলিশকে মোবারকের নাম বলে দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে। কুলী-গিরি ছাড়ার পর মূলত চুরি করে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নিয়েছে সে। ট্রেনের যাত্রীদের কাছ থেকে চুরি করা ছাড়াও স্টেশনের মালবাবুর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে ফেরত দেয় না সে। হুমায়ূন আহমেদ মূলত একজন নিম্নবিত্ত ছিঁচকে চোরের চরিত্র এঁকেছেন যার আছে এক আর্দ্র মন।“গৌরীপুর জংশন” উপন্যাসটি লিখিত হয়েছে তৃতীয় পুরুষে। যদিও পুরো গল্প এগিয়েছে জয়নালের দৃষ্টিকোণ থেকে। এটা ইন্টারেস্টিং। কখনো ��খনো তৃতীয় পুরুষ থেকে লাফ দিয়ে প্রথম পুরুষে চলে এসেছেন লেখক। এই রচনাকৌশল ছাড়াও উপন্যাসের ভাষার কাজ পর্যবেক্ষণ করার মতো। হুমায়ূন আহমেদের স্বভাবসুলভ হিউমারে পূর্ণ বর্ণনারীতি তো আছেই, সাথে আছে আঞ্চলিক ভাষার দারুণ সংমিশ্রণ।নিম্নবিত্তের মনোজগৎ নিয়ে পর্যবেক্ষণের উল্লেখযোগ্য উপাদান আছে আলোচ্য উপন্যাসে। মধ্য ও উচ্চবিত্তের চরিত্র নিয়ে জয়নালের দর্শন বেশ চমকপ্রদ। তার ভাষায় ওরা ‘ভদ্রলোক’। আমি মনে করি, ভদ্রলোকদের দয়ার উপরে সর্বদা নির্ভর করছে তার আর্থিক অবস্থা, এটা সে কখনো ভুলতে পারে বলেই মনে মনে তাদেরকে আক্রমণ করে আনন্দ খুঁজে পায়। কখনো কখনো সামনাসামনি অপমান করেও বেশ শ্লাঘা অনুভব করে জয়নাল। ভদ্রলোক বিপদে জয়নালের বড় ভালো লাগে। তার ভাষায়, ‘ভদ্রলোক বিপদের পড়ে চোখ বড়ো করে যখন এদিক ওদিক চায়,ফটাফট ইংরেজিতে কথা বলে তখন মজাই লাগে’। হুমায়ূন আহমদের প্রায় সকল পাঠকই মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের কাতারে পড়বে, জয়নালের ভাষায় যারা ‘ভদ্রলোক’। নিম্নবিত্ত এক কুলী তার শ্রেণী সম্পর্কে কী ভাবছে তা জেনে একজন মধ্যবিত্ত কিংবা উচ্চবিত্তের মনে কেমন অনুরণন সৃষ্টি হয় তা চিন্তাভাবনার বিষয় বটে।
গৌরীপুর জংশন
Amazon Books
Kindle Price: $2.99
Sales Tax (9.5%): $0.28
Conversion Rate: 130.5 BDT/USD
BDT Price: 425 BDT
গৌরীপুর জংশন
৳ 425
Price Breakdown:
Reviews
There are no reviews yet.